মধুর যত উপকারিতা ও গুণাগুণ

মধু সর্ম্পকে কম বেশি আমরা সবাই জানি। মধু আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারি। মধু নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেক রোগ হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমানিত। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়, হাজার বছর আগে থেকেই অনেক জনগোষ্ঠী মধুকে বিভিন্ন রোগ উপশমের ওষধ হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মধু সম্পর্কে পরীক্ষা ও গবেষণা করে এর প্রয়োজনীয়তা ও বিভিন্ন গুণাগুণ সমন্ধে সুম্পষ্ট ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছে।মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান রয়েছে। এতে চর্বি এবং প্রোটিন নেই। মধুর খাদ্য উপাদান জানার জন্য দেখুন: মধুতে রয়েছে যেসব খাদ্য উপাদান। 

মধুর প্রচলিত ব্যবহার, কোন কোন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং মধুর গুণাগুণ নিচে সবিস্তারে তুলে ধরা হলো:

সর্দি-ঠাণ্ডা দূর করে মধু

ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে পরিবারের সকল সদস্যের জন্য মধু হচ্ছে প্রাকৃতিক ওষুধ। ঠাণ্ডা লাগলে আধা টেবিল চামচ গরম পানিতে ৩ ফোঁটা মধু মিশিয়ে খেলে ঠাণ্ডা ধীরে ধীরে সেরে যাবে। চা, কফি ও গরম দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে হাঁচি, কাঁশি, জ্বর জ্বর ভাব, গলা ব্যাথা, টনসিল, নাক দিয়ে পানি পড়া, জিহ্বার ঘা ইত্যাদি ভাল হয়।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

অনেক সময় আমরা যা খাই তা সহজে হজম হয় না। গ্যাসের সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে এক চামচ মধু খেয়ে নিলে সহজেই খাদ্য হজম হবে।

রূপচর্যায় মধু

প্রাচীনকাল থেকে মধু রুপ চর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর এখন মধুর কদর আরো বেড়ে গেছে। মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং সুন্দর করে। ত্বকের ভাজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। শরীরের সামগ্রিক শক্তি ও তারুণ্য বাড়ায়। বর্তমানে মধু চুলের সোন্দর্য বাড়ানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া নিয়মিত ঠোঁটে মধু লাগিয়ে রাখলে ঠোঁটের কালচে ভাব দূর হয়। 

যৌবন ধরে রাখতে মধুর ব্যবহার

নিয়মিত মধু সেবনে পুরুষদের যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খেলে দুর্বল প্রকৃতির পুরুষরা বেশ উপকার পাবেন।আবার দৈহিক ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য মধু গরম দুধের সাথে পান করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যাবে। তাছাড়া প্রতিদিন কালোজিরা মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে বা দুই চামচ আদার রস মধু দিয়ে খেলে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাবে।

পানিশূন্যতা পূরণে মধু

শিশু বাচ্চা বা বড়দের পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইনের পাশাপাশি মধু দিয়ে সরবত বানিয়ে খাওয়ালে তাৎক্ষণিক পানিশূন্যতা দূর হয়।তাছাড়া অনেক বাচ্চা আছে যারা স্যালাইন খেতে চায় না, তাদের জন্য মধু খুব উপকারি।

গরমে প্রশান্তি দূর করে মধু

গ্রাম বা শহরে গরমের দিনে বাহিরের রোদ থেকে বাসায় এলে এক গ্রাস পানির ভিতরে তিন চাচম মধু দিয়ে সরবত বানিয়ে খেলে শরীরে ঠাণ্ডা প্রশান্তি অনুভূত হয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে মধু

মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য ও অম্লতা দূর হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

মধু শরীরের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের বাহিরের ও ভিতরের যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতা ও যোগান দেয়। মধুতে আছে এমন এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্খিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

পুড়ে গেলে মধুর ব্যবহার

শরীরে কোথাও পুড়ে গেলে সামান্য মধু মেহেদী পাতার সঙ্গে বেটে  লাগালে এতে পোড়াজনিত জ্বালা ও কষ্ট লাগব হয়।

দাতের ব্যাথা

যদি দাঁতে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে মধুতে তুলা ভিজিয়ে ব্যথার স্থানে রাখলে ব্যথা কমে যাবে।

শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ

শিশুদের ছয় মাস বয়সের পর থেকে অল্প করে তিন/চার ফোটা মধু নিয়মিত খাওয়ানো উচিত। এতে তাদের পুরো দেহের বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ভালো হবে। শিশুকে নিয়মিত মধু খাওয়াতে হয় শীত ঝতুতে গরমের সময় নয়। শিশুদের দুর্বলতা দূর করার জন্য মধুতে রয়েছে জিংক ও ফসফরাস। বড়দের তুলনায় বাড়ন্ত শিশুদের বিশেষ করে স্কুলগামী বাচ্চাদের বেশি করে মধু খাওয়ানো উচিত।

হাড় ও দাঁত গঠনে মধু

মধুর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়, চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ওজ্জর‌্য বৃদ্ধি করে। হঠাৎ দাতে ব্যাথা হলে তাহলে মধুতে তুলা ভিজিয়ে দাঁতে রাখলে ব্যথা কমে যাবে।

ঘুম ভাল হওয়ার ক্ষেত্রে মধু

মধু এক প্রকার ঘুম হওয়ার ওষুধ। রাতে শোয়ার আগে এক গ্লাস পানির সাথে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের কাজ করে।

চিনির বদলে মধু

মধু বহু উপকারি উপাদান। খাবারের সাথে চিনর বদলে নির্দ্বিধায় মধু দেওয়া যেতে পারে।

রক্তশূন্যতায় মধু

মধু রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক। কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণ কপার, লৌহ ও ম্যাগানিজ।

ফুসফুসের রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মধু

ফুসফুস, শ্বাসকষ্ট এই সকল রোগ প্রাই আমাদের দেশের মানুষের হয়ে থাকে। তাই যদি একজন এ্যাজমা রোগীর নাকের কাছে মধু ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবে। কেউ কেউ মনে করেন এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।

দেহে তাপ উৎপাদনে মধু

শীতের সময় শরীরকে গরম রাখতে মধুর জুরী নাই। এক অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সাথে মিশিয়ে খেলে শরীরর হবে ফুরফুরে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মধু

মধু চোখের জন্য খুবই ভালো। গাজরের রসের সাথে মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।

ওজন কমাতে মধু

মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিস্কার করে, মধু ফ্যাট কমায়, ফলে ওজন কমে।

মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে মধুকে সর্বরোগের মহৌষধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে আমাদের এই ভেজালের দেশে খাটি মধু পাওয়া একটি দুরুহ কাজই বটে। তারপরেও আমাদের সকলেরই নিয়মিত এক দুই চামচ করে খাঁটি মধু খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

Al Amin Azad: একজন ওয়েব ডেভেলপার যিনি লিখতেও ভালবাসেন। জড়িয়ে আছেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। বর্তমানে একুশে টেলিভিশনে ডিজিটাল মিডিয়া এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও রয়েছে স্বল্প পরিসরে হোস্টিং ডোমেইনের ব্যবসা। এক সন্তানের জনক আজাদ ভাল স্বামী হওয়ার চেষ্টা করেন। খেতে ভালবাসেন বাবা-মার প্রিয় এই সন্তান :)
Related Post