গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া সমস্যা ও সমাধান

গর্ভবতী নারীদের সমস্যার কোনো অন্ত নেই। বাচ্চা কনসিভ হওয়ার পর থেকেই এক এক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। মাথা ব্যাথা, বমি, পেট ব্যাথা, কোমর ব্যাথা, খাবারে অনিহা, ঘুম না হওয়া ইত্যাদি অনেক অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এত সমস্যার ভিতরে অন্যতম একটি সমস্যা হল সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া। যারা এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, তারাই শুধু অনুধাবন করতে পারেন এই সমস্যাটি কতোটা যন্ত্রনাদায়ক। 

নারীদের সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া:

আমদের দেশে মেয়েদের ৯ থেকে ১৩ বছরের ভেতরে শারীরিক পরিবর্তন হতে থাকে। এই পরিবর্তন হবার আগে থেকেই এই লিউকোরিয়া শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়।  দুই বছর আগে থেকে ভ্যাজিনাল স্রাব নির্গত হতে পারে যা মেনপজ এর পর বন্ধ হয়ে যায়। এ স্রাব গন্ধবিহীন বা হাল্কা গন্ধযুক্ত দুধের মত সাদা বা পরিস্কার হয়ে থাকে।

লিওকোরিয়া বা সাদা স্রাব দেখতে কেমন হয়

# সাধারণত সাদা বা হলুদ বর্ণের হয়।

# এমনিওটিক ফুলইড এবং প্রসাবের চাইতে ঘন হয়।

# গন্ধযুক্ত বা গন্ধহীন হতে পারে। কিন্তু প্রস্রাবের মত গন্ধ হবে না ।

#  স্রাব সাধারণত বিক্ষিপ্তভাবে এবং অল্প পরিমাণ নির্গত হয়।

#  আপনার যদি মনে হয় এমনিওটিক ফুলইড নির্গত হচ্ছে তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভবতী নারীদের সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া সমস্যা

অনেক নারীদেরই গর্ভ ধারণের পর এই লিকোরিয়া বা সাদা স্রাবের পরিমান বেড়ে যায়। সাধারণত এটা গর্ভাবস্থার ৪-৫ মাস পর থেকে শুরু হয়। কোনো চিকিৎসা না করালে প্রসবের আগ পর্যন্ত থাকে এই সাদা স্রাবের যন্ত্রণা

গর্ভাবস্থায় লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাবের যন্ত্রনা কেমন

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব ভাঙলে কি পরিমান যন্ত্রণা হয়, তা বলে বুঝানো যাবে না। এটা যার হয়েছে সেই অনুভব করতে পারবে।

স্রাব ভাঙলে অনেক যন্ত্রণা হয়। মাসিকের রাস্তায় প্রচণ্ড চুলকায়। অনেকে অস্থির হয়ে যায় চুলকানের জন্য।তবে গর্ভাবস্থায় সবার যে একই ধরেনের  চুলকাবে বা যন্ত্রণা দেবে তা নয়। এক এক জনের এক এক রকম। কারো আবার সাদা সাদা খণ্ড খণ্ড তরল পদার্থ বের হয়, যা যৌনীতে এসে জমা হয়। প্রসাব করার সময় নিচে গড়িয়ে পরে। পরে ওই এলাকা জুড়ে চুলকানি হতে থাকে। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করে বার বার বাথরুমে যেতে ইচ্ছে করে। বার বার পানি দিয়ে ধুতে ইচ্ছে করে। সব মিলিয়ে এক অসহ্য যন্ত্রণাময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। 

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব নির্গত কেন হয়?

গর্ভাবস্হায় সাদা স্রাব নির্গত হওয়া খুব স্বাভাবিক। অন্য সময়ের তুলনায় গর্ভাবস্হায় এর পরিমাণ বেশি থাকে। কারণ গর্ভাবস্হায় এস্ট্রজেন হরমোন বেড়ে যায় এবং যেীনীর আশেপাশে এসময় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এই সময় জরায়ু মুখ এবং যেীনির দেয়াল নরম হয়ে যায়। তাই স্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

প্রসবের সময় যত ঘনিয়ে আসে স্রাবের পরিমান তত বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হলো প্রসবের সময় যত এগিয়ে আসে, বাচ্চার মাথা তত জরায়ু মুখে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

গর্ভাবস্থার শেষ দিকে স্রাবের পরিমান এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে তা প্রসাবের মত মনে হয়।শেষ এক বা দুই সপ্তাহ আগে স্রাবের সাথে ঘন ঘন শ্লেম্মা বা রক্তের রেখা দেখা যেতে পারে। এর নাম শো। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগে দুই তিন বার এ ধরনের শো দেখা যেতে পারে।

স্রাব বা লিউকোরিয়া নির্গত হওয়া কখন ঝুকি বা সমস্যা

# নির্গত হওয়া স্রাব যদি সবুজ হয়, গন্ধযুক্ত হয় বা মায়ের ব্যাথা অনুভূত হয় বা কোনো কারণে তা অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে ইনফেকশন বা অন্য কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

# কারো ৩৭ সপ্তাহ হওয়ার আগে যদি স্রাবের পরিমান বেড়ে যায় তাহলে তা ডাক্টারকে জানান। কারণ এটা প্রি-টার্ম লেবারের লক্ষণ হতে পারে।

# যদি ভালবা বা যেীনি মুখ ফুলে যায় বা গন্ধবিহীন সাদা স্রাব নির্গত হয় যার ফলে প্রস্রাবের সময় ও শারীরীক মিলনের সময় ব্যাথা হয়, চুলকায় তবে তা ইস্ট ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।

#  যদি মেছে গন্ধযুক্ত, পাতলা বা ধুসর বর্ণের স্রাব হয় যা শারিরীক মিলনের পরে বেশি বোঝা যায় (স্রাব যখন বীর্যের সাথে মিশে যায়) তবে তা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস বা যৌনাঙ ইনফেকশনের লক্ষন হতে পারে।   

স্রাব নির্গত হলে করনীয় কিঃ

# গর্ভাবস্হায় স্রাব নিগর্ত হওয়া স্বাভাবিক বিষয় তাই এটি বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নেই, যদি না তা কোনো ইনফেকশনের কারণে হয়।

# হট টাব বা বাথ টাব এ গোসল না করে শাওয়ার নেয়ার চেষ্টা করুন। যৌনাঙ্গ ভাল করে ধুয়ে ফেলুন গোসলের সময়। শুষ্ক রাখতে হবে। সুগন্ধিযুক্ত ও রুক্ষ সাবান পরিহার করুন। পরিস্কার করার সময় সামনে থেকে পেছনের দিকে মুছুন।

# সুতি কাপড় নরম এবং অধিক ত্বকবান্দব বায়ু চলাচল ও দ্রুত আদ্রতা শুষে নেয় সুতি কাপড়। সব সময়ের জন্য সুতি কাপড় পড়া অধিক ভাল।

# টাইট জামা কাপড় পড়া থেকে বিরত থাকুন।

#Douche ব্যাবহার করা থেকে বিরত থাকুন।এমনিতেও গর্ভাবস্হায় Douche ব্যাবহার উচিত নয় ।কারন এর ফলে যেীনাঙ্গের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ইনফেকশনের ঝুকি বেড়ে যায়।

# ছত্রাকজনিত ইনফেকশন হলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। ডাক্তার সম্ভবত আপনাকে ৬টি ভ্যাজাইনাল সাপোজিটর পর পর ৬ দিনে ব্যবহার করতে দেবে। এটি ব্যবহার করলে চুলকানি চলে যাবে। বাজারে বেশ কয়েকটি কোম্পানির ভ্যাজাইনাল সাপোজিটর পাওয়া যায়। গাইনোমিক্সসহ আরও কয়েকটি সাপোজিটরি রয়েছে।

# তবে সতর্ক থাকবেন, সাপোজিটর ব্যবহারের পর স্বামীর সঙ্গে সহবাস করবেন না আর। তাহলে ছত্রাকজনিত আক্রমণ আবার হবে এবং পুনরায় চুলকানি শুরু হবে।

Lovely Azad: I am Lovely Azad, a girl, wife and Mom. Also I am a Passionate Blogger and Social Media Expert. I love to write about kid, mom, food and any social trend. Please read and express your views about my write up.
Related Post