এক নজরে দেখে নিতে চাই এ লিখাটিতে আমরা কী কী জানতে পারবো?
করলার উপকারিতা ও গুণাগুণ
উচ্ছের উপকারিতা ও গুণাগুণ
করলা ও উচ্ছে খেলে কি হয়?
করলা ও উচ্ছের ভিটামিন গুণ
করলা ও উচ্ছের পুষ্টি গুণ
করলা ও উচ্ছে কোন কোন রোগের উপকার করে?
করলা ও উচ্ছে ঔষধী গুণাগুণ
করলা ও উচ্ছেতে যে রোগের উপশম হয়
করলা ও উচ্ছের পার্থক্য/তারতম্য
উচ্ছে ও করলার উপকারিতা
আমরা কমবেশি সবাই করলা ও উচ্ছে খাই। অনেকের কাছে এদুটি সবজ্বি খুব পছন্দের আবার অনেকের কাছে তিতা স্বাদের খাদ্য। শিশুদের কাছে সুখকর না হলেও বড়দের কাছে খুব মজাদার তরকারি। গরমের সময়তো প্রায় সবাই এটা খেয়ে থাকে। আমরা বেশিরভাগ মানুষই করলা ও উচ্ছে তরকারি হিসাবে খেয়ে থাকি। কিন্তু এর যে ভেষজ উপকারিতা রয়েছে তা হয়তো অনেকেই জানি না।
করলা ও উচ্ছে নিয়ে বিস্তারিত বলার আগে এ দুটোর মধ্যে আসলে প্রকৃত পার্থক্য কি তা জেনে নেই।
করলা ও উচ্ছের পার্থক্য:
করলা ও উচ্ছে মূলত ফল জাতীয় সবজ্বি। দুটি সবজিই charantia প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। তবে দুটি একই প্রজাতির ভিন্ন জাত। এটাই মূল পার্থক্য। উচ্ছে হচ্ছে গরম ও করলা হচ্ছে বর্ষাকালের সবজি। দুটি সবজিরই বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia।
উচ্ছে সাধারনত স্থানীয় জাতের হয়। আমাদের কৃষকরা নিজস্ব পদ্ধতিতেই এর জাত সংরক্ষণ করে থাকে এবং চাষাবাদ করে থাকে। অন্যদিকে করল্লার মূল জাতটি ভারতের।
উচ্ছে দেখতে গোলাকার, আকারে ছোট এবং মোটা ধরনের। আর করলা দেখতে অনেকটা লম্বাটে এবং আকারেও অনেক বড় হয়।
করলা ও উচ্ছের ভিটামিন গুণ:
পুষ্টিগুণঃ
এতে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেটস, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-এ, সি ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন-বি।
উচ্ছে /করলার উপকারিতা:
রক্ত পরিস্কার করেঃ
করলা রক্ত পরিস্কার করে। রক্ত দুষিত হলে অনেক সময় অনবরত মাথা ব্যাথা, এলার্জি, ক্লান্তি বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাস পায়। রক্তের ইম্পিওরিটিসকে করলা পরিস্কার অথবা ডিটক্সিফাইং করতে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিঃ
নিয়মিত করলা খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এজন্য করলার জুসের সাথে সামান্য লেবুর রস আর মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে পান করুন। এভাবে ছয় মাস পান করুন। উপকার পাবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ
ব্লাড গ্লুকোজ লোয়ারিং ইফেক্টের দ্বারা করলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। অ্যান্টি-ডায়াবেটিক গুণে সমৃদ্ধ তিন ধরনের অ্যাকটিভ সাবসটেন্ট রয়েছে।
লিভার নিরাপদ রাখেঃ
হেপাটিক গুণে সমৃদ্ধ করলা লিভারের সুস্বাস্হ্য বজায় রাখতে সহযোগি ভূমিকা পালন করে। লিভারের ছাঁকন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এটি রক্তের অপদ্রব্য পরিস্কার করেএবং লিভারের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে। আর স্বাভাবিকভাবে ক্রিয়ারত লিভারে মেদবৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়, কার্ডিওভাস্কুলারের রোগবালাই কমায়, পরিপাক সমস্যা, মাথা ব্যাথা এবং অন্যান্য অনেক ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করে। তাই লিভারকে ভালো রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার এক কাপ করলার জুস গ্রহন করুন।
কোলেস্টেরল কমায়ঃ
করলা অসাধারণভাবে দেহের লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা কমায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক, হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
নিয়মিত করলা খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। তাই যেকোনো ধরণের রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এজন্য করলার চাও পান করতে পারেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধঃ
করলা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সক্ষম। যে ফ্রি র্যাডিকেল ড্যামেজের কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হয়, তার বিরুদ্ধে এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কাজ করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
করলা ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর বড় উৎস, যা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সক্ষম।
অভ্যন্তরীণ কৃমিনাশকঃ
করলাতে থাকা এন্হেলমিন্টক কম্পাউন্ডস দেহের অভ্যন্তরীন কৃমি থেকে রক্ষা করে। এজন্য এক সপ্তাহ ব্যাপী খালি পেটে করলার জুস পান করুন। ওষুধ ছাড়া স্বাভাবিক খাবারের মাধ্যমে কৃমি কিভাবে কমে তা জানতে পড়ুন:
জ্বর হলেঃ
করলা অনেকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু জ্বর হলে মোটামুটি সবাই পছন্দ করেন। কেননা জ্বরে মুখ তেতো হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে করলা মরিচ পিয়াজ দিয়ে তেলে ভাজি করে ভাতের সাথে খেলে জ্বর মুখে অসাধারন লাগে। ফলে রোগীর পেটে কিছু খাবার অনন্ত যায়। তাই যারা করলা খেতে চান না তারা তারাতারি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে করলা বা উচ্ছের কোনো কাজ আসছে না। বা দ্রুত কাজ হচ্ছে না। মনে হতে পারে কবে এর উপকারিতা দৃষ্টিগোচর হবে। কিন্তু ব্যাপারটি এমন নয়। করলা ন্যাচারাল খাবার হওয়ায় এর কাজ হবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। মনে রাখতে হবে এটা কোনো ওষুধ নয় খাবার।
Leave a Reply