কারো হাত-পা কিংবা শরীর পুরে গেলে বা গরম কিছু পড়লে কি করবেন? অনেকে হয়ত জানেন, অাবার অনেকে হয়ত জানেন না।
গতকাল রাতে অামার হাতে গরম পানি পড়েছিল, অালহামদুলিল্লাহ অামি এখন সুস্থ। একটু চিটচিটে ভাব থাকলেও অাল্লাহর রহমতে হাতে ফোসকা পড়েনি।
গতকাল কিভাবে অামি ট্রিটমেন্ট করেছি এবং এর অাগেও পুড়ে যাওয়া অংশে কিভাবে ট্রিটমেন্ট করে ইনফেকশনের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছি, সেসব অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ। এসব পরামর্শের সবটাই অামার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া।
তবে পরামর্শগুলো ডাক্তারের কাছে যাবার অাগে প্রযোজ্য। এছাড়া বেশি পুড়ে গেলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। এসবই অল্প পরিমান পুড়ে যাওয়া ও পুড়ে যাওয়া রোগির প্রাথমিক চিকিৎসা।
হাত, পা কিংবা শরীরের কোন অংশ পুড়ে গেলে, গরম পানি, গরম চা পড়লে বরফ ও পেষ্ট অত্যাধিক উপকারী।
শরীরে গরম তরল পদার্থ পড়লে বা ছ্যাকা লাগলে
শরীরের কোথাও গরম ইস্ত্রির ছ্যাকা লাগলে, গরম পানি, গরম চা পড়লে ভয় না পেয়ে সাথে সাথে বরফ দেয়ার চেষ্টা করবেন, এতে জ্বালাপোড়া কমার সাথে সাথে ফোসকা পড়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন। অাহত ব্যাক্তি এতে অারামও অনুভব করবেন।
পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় বরফের উপকারিতা
পোড়া অংশে যত বেশি সময় ধরে বরফ রাখবেন তত তাড়াতাড়ি অারোগ্য লাভ করবেন। কারণ ফোসকা না পড়ার প্রধান ঔষধ হচ্ছে বরফ।
বরফ ফ্রিজে অাগে থেকেই রেখে দিবেন, বিপদে কাজে লাগবে। অার যদি রাখতে না পারেন তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ডিপফ্রিজের ভেতরের দেয়ালে লেগে থাকা বরফ ছাড়িয়ে নিবেন।
বরফের বদলে আইসক্রিম লাগান
তাৎক্ষণিকবাবে বরফ যোগার করা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বাইরের দোকান থেকে অাইসক্রিম কিনে অানবেন। অথবা ওই দোকানের ফ্রিজে থাকা বরফ চেয়ে অানতে পারেন।
বরফ না থাকলে পানি কাজে লাগাতে হবে
বাইরে থেকে বরফ অানার সময়টায় বসে না থেকে ঠাণ্ডা পানি ঢালতে থাকবেন। তবে পানি ঢালবেন পোড়া অংশের কাছাকাছি থেকে, অনেক উপর থেকে ঢাললে চামড়ায় ব্যাথা পাবেন অাক্রান্ত মানুষটি, কিংবা পানির প্রেসারে পোড়া অংশের ক্ষতি হতে পারে।
পোড়া অংশে বরফ ব্যবহারে সতর্কতা
প্রায় ঘণ্টা দুই বরফ দিয়ে রাখলে ফোসকা পড়বেনা, তবে খেয়াল রাখবেন, বরফ দেয়ার সময় যেন পোড়া জায়গায় জোড়ে চাপ দিয়ে নড়াচড়া না করেন। বরফ সমান্তরাল না থাকলে, এবড়ো থেবড়ো থাকলে পোড়া অংশ কেটে বা ছিলে যেতে পারে।
মনে রাখবেন, ফোসকা পড়া মানেই সেখানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা, এতে ভোগান্তি বাড়বে, ডাক্তারের কাছে দৌঁড়াদৌড়ি করতে হবে। ভুগতে হবে কয়েক সপ্তাহ। তার চেয়ে ঘরোয়া প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করে মুক্তি পেতে পারেন নিজেই।
বরফের পর পোড়া অংশে পেস্ট লাগান
ঘণ্টা দুই বরফ দেয়ার পর হাত সুতি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে পেষ্ট লাগাবেন বেশি করে। অনেকেই জানেন না পেষ্ট হচ্ছে পোড়ার মহাঔষধ।
পেস্ট লাগালে খানিকটা জ্বালাপোড়া করবে। যদি বেশি জ্বালাপোড়া করে তবে অাবার বরফ লাগাতে হবে। অাবার পেস্ট দিবেন। পেস্ট শুকিয়ে গেলে সেটা একটু ভিজিয়ে অাবার পেস্ট দিবেন।
পেস্ট পোড়া অংশে কয়েক ঘণ্টা রাখলে ধীরে ধীরে জ্বালাপোড়া ভাব কমে অাসবে। অার দ্রুত তাৎক্ষণিক সেরে উঠবেন।
পোড়া স্থলে হেক্সিসল ব্যবহার করুন
সম্ভব হলে পোড়া স্থলে হেক্সিসল দিতে পারেন। হেক্সিসল জীবাণু মুক্ত করে। রোগী অপারেশনের সময় ডাক্তাররা তাদের দুই হাতের কবজি বা কনুই পর্যন্ত হেক্সিসল ব্যবহার করেন হাত জীবাণুমুক্ত করতে। যে কোন ইনফেকশন বা ঘাঁ’তে অনেক ডাক্তার বা নার্স হেক্সিসল ব্যবহার করেন। এটি ঘাঁ শুকাতে সেভলন থেকে বেশি কার্যকর অার ইনফেকশন হতে দেয় না।
কোন কারণে ফোসকা পড়লে সেখানে হেক্সিসল ব্যবহার করতে পারেন। এটি সবার ঘরেই কিনে রাখতে পারেন।
ডাক্তারের কাছে যাওয়ার অাগেই দ্রুত এই ব্যবস্থা নিলে ফোসকার হাত থেকে বাঁচবেন। যদি তা না করে ডাক্তারের কাছে যান, যেতে যেতে ততক্ষণে ফোসকা পড়ে যাবে।
বেশি পুড়ে গেলে বা ফোসকা পড়ে গেলে
তবে যদি শুরু থেকেই বেশি অংশ ফোসকা পড়ে যায় বা চামড়া উঠে যায়, এবং তা যদি অধিক পরিমাণ হয়, তাহলে ঠাণ্ডা পানি ঢালার পাশাপাশি ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন গতি নেই। ওই সময়টায় পেষ্ট না দেয়াই ভালো, দিলেও ডাক্তারের পরামর্শ মতো দিতে হবে, তবে হেক্সিসল দিতে পারেন।
বি:দ্র: এপরামর্শ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞাতার আলোকে লেখা। সবচেয়ে ভালো পরামর্শ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারই দিতে পারবেন।
Leave a Reply