গর্ভকালীন সময়ে নারীদের সমস্যার কোনো শেষ নেই। প্রতিটি ক্ষণে তাদের নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তেমনি একটা অসহনীয় সমস্যা হচ্ছে কৃমি। এসময় কৃমি সমস্যা বেশিরভাগ নারীই ভুগে থাকেন।
গর্ভকালীন সময়ে কৃমি কেন সমস্যা
প্রত্যেক মানুষেরই কম বেশি কৃমি হয়ে থাকে। আমরা কৃমির ঔষধ খেয়ে তা নিবারণ করে থাকি। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কৃমির ঔষধ খাওয়ার অনুমতি ডাক্তাররা কখনোই দেন না। কারণ গর্ভাবস্থায় কৃমির ঔষধ খেলে গর্ভের শিশু ও মায়ের ক্ষতির আশংকা থাকে। এক্ষেত্রে গর্ভপাত হওয়ার প্রবল আশংকা থাকে।
গর্ভাবস্থায় নারীদের কৃমি কেনো হয়
উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ রয়েছে যে কারণে কৃমি হতে পারে। যেমন-
# দূষিত খাবার খেলে এবং দূষিত পানি পান করলে
# অসুস্থ পশুর মাংস খেলে
# শাক-সবজি, মাছ, মাংস ভালোভাবে না ধুয়ে রান্না করলে এবং খেলে
# অন্যের ব্যবহৃত তোয়ালে, রুমাল ব্যবহার করলে
# মলমূত্র ত্যাগের পর হাত ভালোমত না ধৌত করলে
# বাথরুম-পায়খানা নিয়মিত পরিস্কার না রাখলে।
# পরিবারের কারো একজনের কৃমি হলে অন্য সবারও কৃমি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভবতী নারীর জন্য কৃমি সমস্যা কখন ভয়ানক হয়
কৃমির যন্ত্রনা শুরু হয় বিশেষ করে রাতের বেলা। রাতের বেলা কৃমিগুলো মলদ্বারের প্রান্তে চলে আসেেআর নড়াচড়া করে। এতে মলদ্বারে প্রচণ্ড চুলকানি অনুভূত হয়। এসময় নিরবিলি বসে থাকা বা ঘুমানো যায় না। অনেক সময় বার বার পায়খানা চাপ দেয়। এমন অসহ্য অবস্থা একজন গর্ভবতী নারীর জন্য সামাল দেওয়া খুবই কঠিন।
কৃমির ফলে প্রস্রাবের রাস্তায়ও অনেক ক্ষেত্রে চুলকায়
কৃমির কারণে অনেক সময় গর্ভবতী নারীর প্রস্রাবের রাস্তায়ও চুলকানি অনুভূত হতে পারে। কৃমির উপদ্রব বেশি হলে প্রসাবের স্থানেও চুলকানি অনুভূত হয়। আর শরীরের এই স্পর্শকাতর জায়গায় চুলকালে তার অনেক কষ্ট হয়।
গর্ভবতী নারীদের কৃমি দূর করার উপায়
কৃমি যদি একবার হয়েই যায়, তবে তা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। কৃমি উপদ্রব একেবারে দূর করা সম্ভব নাও হতে পারে।
গর্ভধারণের আগে কৃমির ঔষধ সেবন করা
সবচেয়ে ভালো হয় গর্ভধারণের আগে কৃমির ঔষধ সেবন করা। এটা অবশ্যই করা উচিত। তাহলে অন্তত গর্ভাবস্থার প্রথম ৫-৬ মাস কৃমি সমস্যা হবে না।
তিতা জাতীয় খাবার খাওয়া
কৃমি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এসময় করলা, উচ্ছে বা তিতা জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। প্রত্যেক বার খাবারের সময় মেন্যুতে উচ্ছে জাতীয় তরকারি রাখতে হবে। এতে কৃমি সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
নিম পাতার পানি
কৃমি যন্ত্রনা খুব বেশি হলে নিমের পাতা পানির ভিতর দিয়ে জালিয়ে নীল রং এলে পাতা ফেলে ঠাণ্ডা করে পানি খেতে পারেন। তবে এটা প্রতিদিন না করে দুয়েক দিন পর পর খেতে হবে। নিম পাতার পানি বেশি না খাওয়াই ভালো। এতে গর্ভের শিশু বা ভ্রুণের ক্ষতি হতে পারে।
কৃমির উপদ্রবে কুমড়ার বিচি
গর্ভকালীন সময়ে কৃমি কমানোর জন্য মিষ্টি কুমড়ার বিচি খুব উপকারি। দুই টেবিল চামচ মিষ্টি কুমড়োর বীচির গুঁড়ো তিন কাপ পানিতে ৩০ মিনিট ধরে সিদ্ধ করে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এছাড়া এক টেবিল চামচ মিষ্টি কুমড়োর বীচির গুঁড়োর সাথে সমপরিমাণের মধু মিশিয়ে এটিও খালি পেটে সকালে খাবেন। তারপর নাস্তায় একটি কলা খেতে পারেন।
কৃমি না হওয়ার উপায়
যেকোনো সমস্যা হওয়ার পরে তা সমাধানের চেয়ে সমস্যা কিভাবে না হয় সেই দিকে নজর দেয়া বেশি সুবিধাজনক। তাই কৃমি হওয়ার পরে তা কমানোর চেয়ে কৃমি না হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াই বেশি ভাল। গর্ভাবস্থায় কৃমি সমস্যা থেকে বাঁচতে নিম্মোক্ত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
# গর্ভাবস্থায় কৃমি হওয়ার আগেই করলা, উচ্ছে বা তিতা জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।
# খাবার খাওয়া ও তৈরি করার আগে, খাবার পরিবেশনের সময় হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধৌত করতে হবে। রান্নার সময় ভালোভাবে শাক সবজি, মাছ, মাংস ধুয়ে রান্না করতে হবে।
# বাড়ির অন্য কারোর কৃমি সমস্যা দেখা দিলেই ঔষুদের মাধ্যমে কমাতে হবে। আর কৃমিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থেকে (মুখের লালা, এঁটো খাবার খেলে) গর্ভবতী নারীর কৃমি হতে পারে।
# পায়খানা ব্যবহারের পর ভালভাবে হাত সাবান দিয়ে ধৌত করতে হবে, পায়খানা সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
# হাতের নখ সব সময় ছোট এবং পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে বের হওয়ার সময় জুতা বা স্যান্ডেল পড়তে হবে।
গর্ভাবস্থায় কৃমির উপদ্রব দেখা দিলে তা আর বন্ধ করা যায় না। প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এতে যন্ত্রণা কম হয়। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে সন্তান জন্ম না নেয়া পর্যন্ত।
নারীদের গর্ভকালীন সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কৃমি। গর্ভাবস্থায় কৃমির উপদ্রব দেখা দিলে তা আর বন্ধ করা যায় না। তবে প্রাকৃতিক কিছু উপায়ে কৃমি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সবচেয়ে ভালো কৃমি হওয়ার আগেই, যেনো না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
Leave a Reply