asurar-fajilat

আশুরার দিনের তাৎপর্য ও আমাদের সমাজের প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা

আরবি বছরের প্রথম মাস মহরম। এই মাসের মহাত্ম অনেক। এই মাসের ১০ তারিখে ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ এর প্রিয় দোহিত্রদের নির্বিচারে হত্যা করার দিন। এছাড়াও এইদিনে ইসলামের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ন ঘটনা ঘটে গেছে। কিন্তু আশুরার দিন নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আমাদের সমাজে এখনো প্রচলিত আছে। এসব নিয়েই আজকের লেখা। 

একনজরে আশুরার দিন ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ন ঘটনাবলী 

১. এই দিন আদম আ. কে আল্লাহ সৃষ্টি করলেন এবং এই দিনে ‘মা’ হাওয়ার সঙ্গে মিলিত হন আদম আ. এবং এইরকম একটি দিনেই আল্লাহ আদম আ. এর তওবা কবুল করেছিলেন।

২. এই দিনেই নূহ আ. এর জাহাজ জুদি পর্বতে এসে থেমে যায়।

৩. এই দিনেই ইব্রাহিম আ. কে নমরুদ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন এবং ইব্রাহিম আ. রক্ষা পায়।

৪. এই দিনেই মুসা আ. বনি ইসরাইল বাসীদের নিয়ে নীল নদী পাড়ি দেন এবং মুসা আ. কে তাড়া করা ফেরাউন দলবল সহ নীল নদীতে ডুবে মরে।

৫. ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।

৬. এই দিনেই নবী পরিবারের আখেরী নিশান হযরত হুসাইন আ. তার দুধের শিশু সহ এজিদের হাতে নিমর্মভাবে শহীদ হন।

৭. হাদিসে এরকমও শুনা যায় যে, ১০ই মহরমেই এই দুনিয়া ধ্বংস হবে।

কিন্তু তাই বলে আমাদের দেশে মহরমে আসলে যা করে তা কোনো হাদিস কোরআনে নেই। শিয়া সম্প্রদায় লোকেরা চাবুক দিয়ে পিট চাপরায়, আহাজারী করে যা ইসলাম পরিপন্থি। ইসলামে এর কোনো স্হান নেই। আর শিয়া সুন্নি বলে মুসলিমদের বিভক্ত এটাও নেই। আল্লাহ এবং আল্লাহের রাসূল এর আদেশ নির্দেশ মেনে চলা হলো মুসলিমের কাজ। সেখানে মুসলিম ভাগ হওয়ার কোনো কথা লেখা নেই।প্রকৃতপক্ষে আমাদের উচিত আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।

আরও পড়ুন:  কবিতা ‘আমাকে ভয় দেখাও?’

মহররমের প্রথম আমল হচ্ছে পুরো মাসে যে কোন দিন রোজা রাখা, তাহলে অন্য সময়ে নফল রোজা রাখলে যে সওয়াব তার চেয়ে বেশি সওয়াব লাভ করা যাবে।

যেমন- রাসূল সা. ইরশাদ করেন, রমযানের রোজার পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। (মুসলিম)

তবে সাথে সাথে তিনি একথাও বললেন “তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখ এবং এতে ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ কর।’ অর্থাৎ তারা মাত্র একদিন রাখে। তোমরা আগে বা পরে মিলিয়ে দুদিন রোজা রাখ।’ (জমউল খাওয়াইদ)

সুতরাং আশুরার দিন রোজা রাখা এবং তার আগে পরে আরো একটি রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর কেউ যদি শুধু দশ তারিখে রোজা রাখে তাহলে সেই রোজা হবে মাকরূহে তানযিহী। 

মহররমের তিন নম্বর আমল হচ্ছে আশুরার দিন নিজ নিজ পরিবারের খাদ্য খোরাকে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু মুক্তহস্ত হওয়া মুস্তাহাব।

রাসূল সা. ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে পরিবারের পরিজনের জন্য মুস্তহস্তে ব্যয় করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে সারাবছর সচ্ছলতা দান করবেন।”

এই হলো মহরমের করণীয় ও বর্জনীয়। কিন্তু বর্তমান সমাজ আশুরাকে কারবালায় পরিণত করে ফেলেছে। তাই মহররম তথা আশুরা এলেই আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হয় কারবালার মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। মূলত এটা ঠিক নয়। কেননা, কারবালার ঘটনার বহুকাল পূর্বে পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা এ দিনে ঘটেছে। অনেক জাতির উত্থান-পতন এ দিনে হয়েছে। আল্লাহতায়ালা তাঁর বিশেষ বান্দাদের প্রতি এ দিনে রহমত করেছেন। এ কারণেই তো রাসূল সা. নিজে রোজা রেখেছেন এবং সাহাবীদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

কারবালার সাথে আশুরার কোন সম্পর্ক নেই। কেননা, কারবালার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ৬১ হিজরীতে। রাসূল সা. এর ইন্তেকালের পর প্রায় অর্ধ শতাব্দি পর। আর কোন দিন বা সময় মর্যাদাবান হওয়া না হওয়ার সম্পর্ক শরীয়তের আল্লাহ ও রাসুল সা. এর সাথে। আর রাসূল সা. আশুরার ব্যাপারে এতো ফযিলত এর কথা বলা সত্ত্বেও কারবালার সম্পর্কে কিছু বলে যাননি। তাহলে বুঝা যায়, কারবালার নামে মানুষ যা করছে এটা নিতান্তই মনগড়া। দ্বীন ও ইসলামের সাথে এর নূন্যতম কোন সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন:  শিশুর আকিকা করার প্রয়োজনীয়তা ও নিয়মাবলী

আশুরার নামে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা যে শোক মিছিল করে মাতম করে, বিলাপ করে, তাযিয়া বানিয়ে ঢোল-তবলা পিটিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জনের ন্যায় বিসর্জন দিচ্ছে এগুলো সম্পূর্ণ বিদআত। অনৈসলামিক কার্যকলাপ।

এর দ্বারা উদ্দেশ্য, মুসলমানদের মৌলিক আবেদন থেকে সরিয়ে গুনাহ এবং নাফরমানীতে লিপ্ত করা। অথচ ইসলামে জন্মদিবস, মৃত্যুদিবস ও শোক দিবস বলতে কিছুই নাই এবং এর কোন গুরুত্বও নেই। বরং এগুলোর ব্যাপারে শরীয়তের পক্ষ থেকে ধিক্কার এসেছে।

রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি শোকে-দুঃখে চেহারায় চপেটঘাত করে, জামার বুক ফেঁড়ে ফেলে এবং জাহেলী যুগের ন্যায় হায়-হুতাশ করে, সে আমার উম্মতের অর্ন্তভূক্ত নয়। (মিশকাত)

আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে তার উপর আমল করার তৌফিক দান করুন।

======== Meta description and tag=========

আরবি বছরের প্রথম মাস মহরম। এই মাসের ১০ তারিখ ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ এর প্রিয় দোহিত্রদের নির্বিচারে হত্যা করার দিন। কিন্তু এই দিন নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা আমাদের সমাজে এখনো প্রচলিত আছে।


Posted

in

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *