গাজর একটি অত্যন্ত উপাদেয় ও পুষ্টিকর মৌসুমী সবজি। গাজর খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুণও অনেক। এই গাজর আপনি বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন। তবে গাজর হালুয়া বানিয়ে খাওয়ার মজা অন্য যেকোনা উপায়ের তুলনায় এগিয়ে থাকবে। আজকে কিভাবে অত্যন্ত সহজে বাসায় গাজরের হালুয়া বানানো যায়, তাই দেখাবো।
আমি যখন প্রথমবারের মতো গাজরের হালুয়া বানানোর চেষ্টা করি, তখন পত্রিকায় রেসিপি দেখে বানিয়েছিলাম। সেখানে বেশ কিছু জটিলতা ছিল, যা একজন নতুন রাধুনিকে বেশ সংশয়ে ফেলে দেয় যে, হালুয়াটা কি সুস্বাধু হবে কি না?
কিন্তু আমি সেই অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন রাধিয়েদের জন্য একবারেই সহজ একটি গাজরের হালুয়ার রেসিপি দেব। এখানে কোনো প্রকার জটিলতা নেই।
তবে গাজরের হালুয়ার রেসিপি শুরু করার আগে গাজরের পুষ্টিগুণ নিয়ে দু’চার কথা না বললেই নয়। গাজরে প্রচুর পরিমান ভিটামিন এ পাওয়া যায়, গাজর খেয়ে শরীরের ডায়েট করা যায়, গর্ভবতী নারীদের গাজর অনেক উপকার করে। এছাড়া ত্বকের পরিচর্যায় গাজর বহুল ব্যবহৃত। গাজরের পুষ্টিগুণ জানার জন্য দেখুন: গাজরের পুষ্টিগুণ ও আমাদের শরীরের কি কি উপকারে আসে।
গাজর আপনি হালুয়া ছাড়াও আরও কয়েকভাবে খেতে পারেন। গাজরের পায়েস আরও একটি সুস্বাদু খাবার। গাজরের বিভিন্ন পদের জন্য দেখুন: গাজর খাওয়ার ৫টি মজাদার উপায়।
অনেক তো কথা হলো। আর দেরি না করে এবারের সরাসরি চলে যাবো গাজরের হালুয়ার রেসিপিতে। আমরা এক কেজি গাজর দিয়ে হালুয়া বানাতে কি কি লাগে এবং কিভাবে বানাতে হয় তাই দেখাবো।
গাজরের হালুয়ার রেসিপিতে যা যা লাগবে:
১. এক কেজি গাজর
২. আধাকাপ তেল (চায়ের কাপ)
৩. চিনি লাগবে প্রায় হাফ কেজি (মিষ্টি আপনার স্বাদমতো দিতে পারেন)
৪. গরম মশলা (এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ ২-৩টা করে)
৫. তেজপাতা সংগ্রহে থাকলে ১-২টা দিতে পারেন।
৬. কয়েক চিমটি লবন
গাজরের হালুয়া বানানোর প্রক্রিয়া:
ধাপ ১:
প্রথমে ১ কেজি পরিমান গাজর ধুয়ে পরিষ্কার করে কেটে টুকরো টুকরো করে সিদ্ধ করে নিন। টুকরো টুকরো করার উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্রুত ও ভালোমতো সিদ্ধ করা।
ধাপ ২:
এরপরে সিদ্ধ গাজরটাকে হালুয়ার মতো মিহি করে নিন। আপনি হাত দিয়ে চটকিয়ে নিতে পারেন বা বেটে নিতে পারেন। অথবা ব্লেন্ডারে দিয়ে মিহি করে নিতে পারেন। হাত দিয়ে চটকালে গাজর দানা দানা থাকবে, যা হালুয়ার সৌন্দর্য নষ্ট করবে। মোটকথা আপনি সিদ্ধ গাজরটাকে টচকিয়ে মিহি করে নেবেন তা যেভাবেই করেন না কেনো।

ধাপ ৩:
এবারে আপনাকে মিহি গাজর তেলে ভাজতে হবে। এজন্য একটি প্যানে হাফ কাপ তেল দিয়ে গরম করুন। তেল হয়ে আসলে তার মধ্যে পুরো গাজরটা দিয়ে দিন। একটু পরে পরিমান মতো চিনি ও গরম মসলাগুলো দিয়ে দিন। কয়েক চিমটি লবনও দিয়ে নিন। লবন দিলে চিনি কম দিলেও মিষ্টিভাবটা চলে আসবে।
ধাপ ৪:
এভাবে নাড়তে থাকুন। নাড়া কখনোই বন্ধ করবেন না। বন্ধ করলে নিচে পাত্রের সঙ্গে ধরে যেতে পারে। হালুয়ার রঙ গাঢ় লাল/বাদামী হলে এবং পানি শুকিয়ে হালুয়াটা প্রায় শক্ত হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন। হালুয়া বানানো শেষ।
ধাপ ৫:
এবার হালুয়া হালকা ঠাণ্ডা করে হাতের তালুতে গোল গোল করে পরিবেশন করুন। আপনি চাইলে বক্সে করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। পরে জেলির মতো খেতে পারবেন।
গাজরের হালুয়ার রেসিপি টিপস:
# সিদ্ধ গাজর মিহি করার পরে এতে খানিকটা পানি থাকে। তাই একটা পাতলা কাপড়ে রেখে পানি ঝড়িয়ে নিলে পরবর্তীতে কষ্ট কম হবে। অর্থাৎ তেলে ভাজার সময় অল্প কিছুক্ষণ নাড়লেই হালুয়াটা প্রায় শক্ত হয়ে যাবে।
# চিনি যেহেতু পানি জাতীয়। তাই হালুয়ার মধ্যে চিনি দেয়ার পরে ঘন হালুয়া আবার পাতলা হয়ে যাবে। আরও কিছুক্ষণ আগুনে তাপ দিলে হালুয়া ঘনও শক্ত হতে থাকবে। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
গাজরের হালুয়া নিয়ে আরও কিছু কথা:
# অনেক রেসিপিতে তেলের পরিবর্তে ঘি দিতে বলা হয়, আবার গাজরে দুধ দিতে বলা হয়। আপনি এভাবেই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। কিন্তু আমার রেসিপিটা একেবারে নতুনদের জন্য। এজন্য যথাসম্ভব সহজ করে রাখলাম। যেনো যে কেউ দেখলেই করতে পারে। অল্প কিছু আইটেম দিয়েও যেনো মজার গাজরের হালুয়া বানানো যায়।
হালুয়া কেমন বানালেন, এই রেসিপি কোনো উপকারে আসলো কি না তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আর রেসিপিটি ভাল লাগলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতেও ভুলবেন না।
Gazar Halwa Bangla recipe, Carrot Halwa recipe, গাজরের হালুয়ার রেসিপি, গাজরের মজার হালুয়া
Leave a Reply