সকল বাবা-মা ই শিশুকে অত্যন্ত যত্মে রাখে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এতো যত্ম পরিচর্যার পরেও শিশুর ঠাণ্ডা-সর্দি লেগে যেতেই পারে। ঠান্ডা সর্দিতে বাচ্চা যেমন কষ্ট পেয়ে কান্না করে, এতে বাবা মারও কম কষ্ট হয় না। এমতাবস্তায় আমাদের ডাক্তারের শরণাপণ্ণ হয়ে উপায় থাকে না। শিশুদের সর্দি-ঠাণ্ডার লাগলে ডাক্তাররা নরসল নামের একটি ন্যাসাল ড্রপ প্রায়ই দিয়ে থাকেন।
Norosol Nasal Drop টির ব্যবহারের কারণ নিয়ম ও উপকারিতাই আজকে বর্ণনা করব। ডাক্তাররা ব্যস্ত থাকার কারণে তাদের কাছ থেকে আসলে অতো বেশি কিছু জানা যায় না। কিন্তু সচেতন বাবা-মারা সন্তান বা নিজেরা ওষুধ খাওয়ার আগে বুঝে শুনে খাওয়ার চেষ্টা করেন, কেনো এই ওষুধটি খেলাম। তাদের জন্যই Norosol Nasal Drop নিয়ে এই পোস্টটি।
নরসল ন্যাসাল ড্রপের আগে কিছু কথা:
বাবা মায়ের উচিত শিশুর যেনো ঠাণ্ডা সর্দি না লাগে সেই জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। ঠাণ্ডা লাগার আগে একটু যত্ম বেশি নিলে বাবা মায়ের কষ্ট বেশি হবে, কিন্তু মনে রাখবেন আগে কষ্ট কম করে শিশুর ঠাণ্ডা বাধালে পরে আরও বেশি কষ্ট। ডাক্তারের কাছে যাওয়া, শিশুর কান্না সহ্য করা, এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাত-বিতণ্ডা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই আগেই সাবধান হবেন। শিশুদের কোনো সর্দি ঠাণ্ডা লাগে তা জেনে সচেতন থাকার জন্য পড়তে পারেন: বাচ্চাদের সর্দি-ঠাণ্ডা লাগার ৯ কারণ।
আর একটি বিষয়, বাচ্চাদের সর্দি-ঠাণ্ডা লাগলেই দৌড়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। অন্তত প্রথম ১-২ দিন বাসায় নিজেরা চেষ্টা করে দেখতে পারেন ঠাণ্ডা সারানো যায় কিনা। যদি দেখেন ২-৩ দিনের পরেও ঠাণ্ডা কমছে না তবে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। পাড়ার কোনো ওষধ বিক্রেতার কথা অনুযায়ী শিশুকে কোনো ধরনের ওষধ দেবেন না। শিশু বা নবজাতকের ঠাণ্ডা সারানোর জন্য ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য দেখতে পারেন: বাচ্চাদের ঠাণ্ডা লাগলে ঘরোয়া চিকিৎসা পোস্টটি।
আমাদের এই পোস্টটি মূলত শিশুদের জন্য বহুল ব্যবহৃত নরসল ড্রপ নিয়ে। বাচ্চাদের কেনো দেয়া হয়, কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, নরসলের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে কি না? এসব বিষয় নিয়ে লিখা হবে।
বাচ্চাদের নরসল ড্রপ কেনো দেয়া হয়
বাচ্চাদের অনেকগুলো রিফ্লেক্স ঠিক আমাদের মত শক্ত-পোক্ত না। তারা হাঁচি, কাশি দিতে পারলেও অনেক সময় তা তাদের শারীরিক গঠনগত নাজুকতার জন্য ঠিক উপযুক্ত পরিমাণ জোড় দিয়ে দিতে না পারায় তাদের উর্ধ্ব-শ্বাসতন্ত্র পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার হয় না। অনেক সময় বাচ্চাদের নাকে ঘাম, দুধ, পানি বা অন্য যেকোন খাবার, ধুলোবালি ইত্যাদি জমে যায়। এছাড়া শরীরের স্বাভাবিক সিক্রেশনগুলো তো আছেই। তারা হাঁচি, কাশি দিয়ে কিছুটা পরিষ্কার করতে পারে, কিন্তু আমাদের মত করে তো আর নাক ঝাড়তে পারে না। ফলে আস্তে আস্তে বাচ্চা শ্বাস-তন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। যা পরবর্তীতে ঘন ঘন হতে থাকে এবং নিউমোনিয়া বা এজমার মত জটিলতার জন্ম দেয়।
তো ডাক্তারদের কাছে বাচ্চার ঠাণ্ডা-সর্দির সমস্যা নিয়ে গেলে তারা অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি একটি কমন ওষুধ দিয়ে দেন নরসল ন্যাসাল ড্রপ। এই ওষুধটি মূলত নাকের শ্লেষ পরিস্কার করে দেয়।
নরসল ড্রপের ব্যবহার বিধি ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
নরসল ড্রপের জন্য ডাক্তাররা বলে থাকেন, এর কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর এটি দুই ফোঁটা করে ব্যবহার করা যায়। ডাক্তাররা বলেন যে, শিশুর ঠাণ্ডা-সর্দি না থাকলেও নরোসল ড্রপ দিতে পারেন। কারণ নরোসল ড্রপ নাক পরিস্কার করে, আর শিশুর নাক শুধু সর্দি না আরও নান কারণে জ্যাম হয়ে থাকতে পারে। নরোসল ন্যাসাল ড্রপ দিয়ে দিলে সর্দিগুলো জমাট বাঁধবে না বরং গলে গিয়ে খাদ্যনালী হয়ে পেটে চলে যাবে, নাকও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
কি আছে নরসল ন্যাসাল ড্রপে
বাজারে মাত্র ২৫ টাকা দামে Norsol Nasal Drop পাওয়া যায়। এটা তেমন জটিল কোনো রাসায়নিক উপাদান নয়। নরমাল স্যালাইনের এম্প্যুল। এর ৯৭ ভাগই হলো সোডিয়াম ক্লোরাইডের অর্থাৎ খাবার লবনের দ্রবন। এজন্যই এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই বরলেই চলে। তবে দাম সরবরাহের ঘাটতির কারণে অনেকে ৩০-৩৫ টাকায় নিয়ে থাকেন।
নরসল ন্যাসাল ড্রপের উপকারিতা
নরসলের উপকারিতা হচ্ছে এটি শিশুদের নাক পরিস্কার রাখে। যাদের শিশু আছে ডাক্তাররা তাদের বাসায় সবসময় নরসল ড্রপ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। নাক পরিষ্কার না রেখে আপনি বাচ্চাকে যতই নেবুলাইজ করেন, এন্টি-বায়োটিক এবং ডাক্তার গুলে খাওয়ান না কেন, কাজ হবে না।
Leave a Reply