শীতকালীন সবজি গাজর দেখতে যেমন সুন্দর ও আকর্ষণীয় তেমনি খেতেও সুস্বাদু। তদুপরি পুষ্টিতেও ভরপুর। এত সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন হওয়ার বড় কারণ এর মধ্যে বিদ্যমান বিটা-ক্যারোটিন। গাজর বা গাজরের রস পুষ্টিগুণে ভরপুর।
গাজরের রস বা জুস আমাদের মানবদেহে কি কি উপকারে আসে তাই আজ বর্ণনা করা হবে। পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, গাজর কাঁচা খেলে এরপুষ্টিগুণ মানবদেহে সবচেয়ে বেশি কাজ করে। আর গাজর কাঁচা খাওয়ার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে গাজরের জুস বা রস বানিয়ে খাওয়া। গাজরের জুস কিভাবে বানাতে হয় তা দেখার জন্য পড়ুন: সহজেই বাসার মধ্যে গাজরের জুস বানানোর নিয়ম।
গাজর শুধু রস বা কাঁচা খাওয়া যায় তা নয়। গাজরের আরও অনেক সুস্বাদু আইটেম আছে। গাজরের হালুয়া বা পায়েস বানিয়ে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি খাওয়া যায় তরকারি রান্না করে। গাজর খাওয়ার রেসিপির জন্য দেখুন: গাজরের কয়েক পদের রেসিপি লেখাটি।
গাজরের রসে পুষ্টিগুণ
আর কথা না বাড়িয়ে এবারে আমরা দেখে নেব, গাজরের রসে কি কি ভিটামিন বা পুষ্টিগুণ আাছে। আর গাজরের রস আমাদের শরীরে কি কি কাজে লাগে? এখানে গাজরের প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী অংশে পুষ্টিমান উল্লেখ করা হলো-
# খাদ্য শক্তি- ৪৮ ক্যালোরি
# শর্করা- ১০.৬০ গ্রাম
# খনিজ পদার্থ- ১.১০ গ্রাম
# ক্যালসিয়াম- ৮০.০০ মি. গ্রাম
# ফসফরাস- ৫৩০.০০ মি. গ্রাম
# লৌহ- ২.২০ মি. গ্রাম
# ক্যারোটিন- ১৮৯০.০০ মাইক্রোগ্রাম
# ভিটামিন বি ১ – ০.০৪ মি. গ্রাম
# ভিটামিন সি- ৩.০০ গ্রাম
উৎস : কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, বারি-২০০৫
অন্যান্য সবজির তুলনায় গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর। উদাহরণস্বরূপ মুলার চেয়ে গাজরে ফসফরাস আছে ২৬ গুণ, ক্যারোটিন প্রায় ৬৩০ গুণ।
গাজরের রসের উপকারিতা
গাজর নিজে যেমন সুন্দর তেমনি মানুষের রঙ উজ্জ্বল করতেও এটি সহায়ক। পুষ্টিসমৃদ্ধ এ সবজিটির বাজারমূল্য মৌসুমের সময় থাকে একেবারেই সস্তা। এর উচ্চ পুষ্টিমান জানা থাকলে এর বাজারমূল্য চড়ে যেতো বহুগুণ। গাজর আমাদের শরীরের কি কি উপকারে আসে তা নিচে বর্ণনা করা হলো:
চোখের মহৌষধ: গাজরের আকর্ষণীয় বর্ণের মধ্যেই রয়েছে এর ঔষধি গুণ। গাজরের বিটা ক্যারোটিন নিজে নিজেই ভিটামিন-এ’তে রূপান্তরিত হয় যা দেহের জন্য খুবই উপকারী। বিটা-ক্যারোটিন আমাদের দেহের ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে রেটিনল বা ভিটামিন-এ’তে রূপান্তরিত হয়, আর ভিটামিন-এ আমাদের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে : গাজরের রস লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে হজম শক্তির উন্নতি হয়।
হাড়ের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক : রোগ প্রতিরোধ গাজরের অস্টিওপরোসিস, আথ্রাইটিস ও বিভিন্ন রস হিতকর।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক : গাজরে রয়েছে ভিটামিন-ই, যা ক্যান্সার প্রতিরোধী। তাই গাজর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। গাজরে বিদ্যমান বিটা-ক্যারোটিন আমাদের ত্বককে সূর্যের অতি বেগুণি রশ্মির হাত থেকে সুরক্ষা করে এমনকি ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।
বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে : বয়সের ছাপ কমাতে গাজরের রস সাহায্য করে। গাজর বিটা- ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কোষের ক্ষয় রোধে সহায়ক। ফলে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়াকে রোধ করে
ওজন কমায় : গাজরে ক্যালোরির পরিমাণ যৎসামান্য, যা ওজন কমাতে বেশ সহায়ক।
কোলস্টেরল কমায় : গাজরে পটাসিয়াম বিদ্যমান, যা কোলস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
চর্বি কমায় : গাজরের রস লিভারের চর্বি ও পিত্ত কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের লাবণ্য বাড়ায় : গাজরের রস ত্বকের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে সুরক্ষা করে।
ব্যথা ও জ্বালাপোড়া কমায় : বয়সজনিত যে কোনো ব্যথা-বেদনা ও শরীরের জ্বালাপোড়া কমাতে গাজরের রস হিতকর।
গাজর আল্লাহর এক অপূর্ব দান। এর উপকারিতার শেষ নেই। তাই-সুস্থ নীরোগ থাকতে যদি চান, বেশি করে গাজর খান। গাজর ক্যারোটিনের রাজা, যা ভিটামিন-এ’র উৎস। তাই শিশুদের প্রতিদিন অন্তত মৌসুমের সময় গাজর খাওয়ানো উচিত।
Leave a Reply