কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। এই ইবাদতের মূলকথা হলো ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন।
আল্লাহর নিকট কোরবানির পশুর মাংস বা রক্ত কোনটাই পৌঁছে না। পৌঁছে শুধু নিয়্যাত। তাই কোরবানির পূর্নতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক পশু কোরবানি সস্পাদন করা।
কোরবানি পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেমন কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হয়, তেমনি কোরবানি পালন করতে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।
পশু কোরবানির কিছু অবশ্য পালনীয় নিয়ম
# উম্মে সালমাহ (রা:) থেকে বর্নিত যে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোরবানি করার ইচ্ছে রাখে, সে যেনো যিলহাজ্জ মাস শুরু হতেই প্রথম দশ দিন তার চুল, নখ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকে। মুসলিম- (৪৯৫৬)।
# নিজের কোরবানি নিজেই করাই হচ্ছে উত্তম। নিজে না জানলে একজন মাওলানার কাছে থেকে জেনে জবেহ করা জায়েজ আছে। নিজে জবেহ করতে না পারলে জবেহ করার সময় কোরবানিদাতা নিকটে থাকা উত্তম। কুরবানির নিয়ত মনে মনে করলে হবে। জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহ আকবার বলা জরুরী।
কোরবানির পশুর যেসব গুণাবলী থাকতে হবে
# উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা যায়। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। (কাযীখান৩/৩৪৮, বাদাউস সানায়ে ৪/২০৫)
# যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কোরবানি করা যায়।
# কোরবানির জন্য সুন্দর ও নিখুঁত পশু বাছাই করা উত্তম। যেসব পশু অন্ধ, খোঁড়া এবং জবেহ করার স্থানে যেতে অক্ষম, লেজ, শিং কিংবা কান কাটা বা ভাঙ্গা বা দুর্বল ইত্যাদি কোরবানীর পশু কোরবানির উপযুক্ত নয়।
কোরবানির পশুর বয়স কত হতে হবে
# উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা যায়। তবে অবশ্যই কমপক্ষে ৬মাস বয়সের হতে হবে।
# ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। (কাযীখান ৩/৩৪৮,বাদাউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬)।
কোরবানির পশুর মাংস বণ্টনের নিয়ম
# একটি ছাগল, ভেড়া, দুম্বা একজনই কোরবানি দিতে পারে। কিন্তু গরু, মহিষ, উট একাধিক ভাগে মিলে কোরবানি দেয়া যাবে। তিন, পাঁচ বা ৭ জন মিলে কোরবানি দিতে পারবেন। তবে কেউ চাইলে একাও কোরবানি দিতে পারেন।
# কয়েক জন মিলে ভাগে কোরবানি করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নয়। এটা কোরবানিদাতাদের মধ্যে ভাগের বিষয়ে বলণা হয়েছে। (আদ্দুররুল মুখতার৬/৩১৭,কাযীখান ৩/৩৫১)
# কোরবানির গোশত সমান তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। এক ভাগ আত্বীয়-স্বজন, আরেক ভাগ পাড়া-প্রতিবেশীকে দিতে হবে। আর এক অংশ যে কুরবানি দিবে তাদের পরিবারের জন্য বরাদ্দ। (মিরআত ৫/১২১, আল মুগনী ১১/১১১ পৃঃ)
কোরবানির মাংস যেনো সঠিকভাবে বণ্টিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ অনেক অভাবী মানুষ থাকে, যারা কোরবানির সময়ের জন্য অপক্ষো করে মাংস খাওয়ার জন্য।
কোরবানির সময় যা করা যাবে না
# কোরবানির পশু যবেহকারী ও মাংস প্রস্তুতকারীকে কোরবানির পশুর মাংস থেকে পারিশ্রমিক স্বরূপ দেয়া যাবে না। তবে কোরবানিদাতা চাইলে নিজের ভাগ থেকে দিতে পারেন।
# কোরবানির চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। সদকা করার ক্ষেত্রে স্বজনদের মধ্যে কেউ অভাবী থাকলে তারা অগ্রাধিকার পাবে।
# কোরবানির পশুর কোন অংশ বিক্রি করলে, তা থেকে লব্দ অর্থ নিজের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তা সদকা করে দিতে হবে।
সামর্থবান প্রত্যেক মুসলমানের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানি পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেমন কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হয়, তেমনি কোরবানি পালন করতে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। কোরবানির মাংস বণ্টনওে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সব থেকে বেশি প্রয়োজন মনের পরিশুদ্ধতা অর্জন। এটিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য।
Leave a Reply