ঔষধী গাছ নিমের উপকারিতা

নিম একটি ঔষধী গাছের নাম। সবার কাছেই পরিচিত এই নিম গাছ গ্রাম অঞ্চলের বেশিরভাগ বাড়ীতেই আছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Azadirachta indica. এর ইংরেজি পরিভাষা হচ্ছে neem, nimtree. ভারতীয় উপমহাদেশের কয়েকটি দেশেই এই গাছটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

এই ঔষধী গাছটিতে রয়েছে অবিশ্বাস্য অনেক গুণাগুণ। নিমগাছের সব গুণাগুণ নিয়েই আজকের লেখা।

পাচঁরাজনিত সমস্যা দূরীকরণ

নিমপাতা বেটে কয়েক দিন শরীরে লাগালে গায়ের পাচঁরা, চুলকানি ভাল হয়।

কৃমিজনিত সমস্যার সমাধান

যাদের পেটে বিভিন্ন রকম কৃমি জ্বালাতন করে, তাদের জন্য নিমপাতা অন্যতম ঔষধ। বাচ্চাদের নিমপাতার রস খাওয়ালে কৃমি সমস্যা সমাধান হয়।

গর্ভবতী নার‌ীদের জন্য আর্শীবাদ

নিমপাতা গর্ভবতী নার‌ীদের জন্য আর্শীবাদ। কেননা গর্ভকালীন সময়ে গুড়া কৃমির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। কিন্তু এই সময়ে ঔষধ সেবন করা যায়না। তাই নিমপাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে কৃমির যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এভাবে ১৫ দিন সকাল-বিকাল খেতে হবে। গর্ভবতী নারীদের কৃমি সমস্যার সমাধান জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।

কফজনিত সমস্যা

কফ-কাশি কমবেশি সবারই হয়ে থাকে। কফজনিত বুকের ব্যাথায় ৩০ ফোটা নিমপাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে তিন চার বার খেলে বুকের ব্যাথা কমে যায়।

জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম পাতা

নিমপাতায় শুধু বিভিন্ন রোগই উপমম হয়না। এর রয়েছে নারী-পুরুষের জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিশেষ কার্যাবলী। সহবাসের পূর্বে নিমতেল তুলায় ভিজিয়ে স্ত্রী যৌন অঙ্গে ১৫ মিনিট রাখলে স্পার্ম মারা যায়। নিম লিফ ট্যাবলেট পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন এক মুঠো নিমপাতা খেলে গর্ভধারণ হয় না। দেড় মাস একটানা নিম তেল খেলে স্ত্রী গর্ভবতী হয় না।

আলসার উপশমে

নিম পাতার নির্যাস ও নিম বীজ নিম্বিডিন নির্যাস খেলে পেপটিক ও ডিওডেনাল আলসার উপশম হয়।

বহুমূত্র রোগে

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে ডায়বেটিস রোগ ভাল হয়। সকালে ১০ টি নিমপাতা গুড়া বা চিবিয়ে সেবন ডায়বেটিস রোগের আরোগ্য হয়।নিমপাতার রসে ইনসুলিন নেয়ার প্রবণতা কমে যায়।

আরও পড়ুন:  অভিজ্ঞতার আলোকে আদ-দ্বীন হাসপাতালের রিভিউ

উকুন নির্মূল

উকুন সারাতে নিম পাতার জুরি নেই। নিম পাতা বেটে সপ্তাহে ২/৩ দিন চুলে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন উকুন চলে যাবে।

দাঁতের রোগ নিরাময়

দাঁত পরিস্কার করতে নিমের ডালের তুলনা নাই। কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভাল থাকে। দাঁত মজবুত করতে নিমের ছাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে বিভিন্ন রোগবালাই হতে মুক্ত থাকা যায়।

জন্ডিস রোগের ঔষধ

প্রতিদিন খালি পেটে ২৫-৩০ ফোটা নিম পাতার রস একটু মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে জন্ডিস ভাল হয়।

বসন্তের ঘা শুকাতে

নিমপাতা বেটে কাঁচা হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে বসন্তের গুটিতে দিলে দ্রুত ঘা শুকিয়ে যায়।

ব্রণ সারাতে নিম পাতা

নিম পাতা বেটে মিহি করে মধুর সাথে মিশিয়ে ব্রণে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর দুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত লাগালে মুখ হবে ব্রণ মুক্ত।

চোখের ব্যথা সারাতে

চোখের ব্যাথা সারাতে নিম পাতা ওষধীর কাজ করে।সামান্য শুষ্ক আদা ও সৈন্ধব লবণ দিয়ে মিশিয়ে হালকা গরম করে একটি পরিস্কার পাতলা কাপড়ে লাগিয়ে চোখ ঢেকে দিলে চোখের স্ফীতি ও ব্যাথা ভাল হয়ে যায়।

নিম চা

শুকনো নিম পাতা গুঁড়ো অথবা তাজা নিমের ৬/৭ টি পাতা গরম পানিতে ছেড়ে ২/৩ মিনিট জ্বাল দিলে তার সাথে মধু মিশিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন নিম চা।

রক্ত পরিস্কার করতে নিম পাতা

নিম পাতার রস রক্ত পরিস্কার করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং রক্ত চলাচল বাড়িয়ে হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে।

ছত্রাক সংক্রমণ রোধ

ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে নিম পাতা। সূত্র—টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

পোকা-মাকড়ের কামড়

পোকা মাকড় কামড় দিলে বা হুল ফোটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যথা উপশম হয়।

অর্জীন

পেটের অসুখে যদি কেউ অনেক দিন যাবত ভুগে থাকেন, তাহলে নিম পাতার রস ৩০ ফোটার সাথে একটু পানি মিশিয়ে খেলে পাতলা পায়খানা ভাল হয়।

আরও পড়ুন:  গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া সমস্যা ও সমাধান

ক্যান্সারের ঔষধ হিসেবে

নিম তেল, বাকল ও পাতার নির্যাস ব্যবহারে ক্যান্সার-টিউমার, স্কীন ক্যান্সার প্রভৃতি ভাল হয়।

পানি বিশুদ্ধকরণ

গোসলের পানি বিশুদ্ধ না হলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রমণ করতে পারে। তাই পানি শুদ্ধ করতে নিম পাতার প্রয়োজন রয়েছে। দুই লিটার পানির মধ্যে ৫০টি নিমপাতা সিদ্ধ করতে হবে। পাতাগুলো নরম ও বিবর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পানি ফুটাতে হবে। পানি সবুজ রঙ ধারণ করলে নামিয়ে বোতলে ঢেলে রাখতে হবে। প্রতিদিন গোসলের পানিতে ১০০ মি.লি. পরিমাণ নিমপাতার পানি মিশিয়ে গোসল করলে চামড়ার ইনফেকশন দূর হবে। এ ছাড়া ব্রণ এবং হোয়াইট হেডস দূর হবে।

স্কিন টোনার হিসাবে নিম

নিম পাতা রুপচর্যা করতে বিশেষ কাজে লাগে। প্রতিরাতে তুলার নরম বল নিম পাতা সিদ্ধ পানিতে ভিজিয়ে মুখে লাগাতে হবে। এতে ব্রণ, ক্ষত চিন্হ, মুখের কালো দাগ দূর হয়।

খুসকি দূর করতে নিম

চুলের খুসকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল ম্যাস‍াজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। খুসকি দূর হয়ে যাবে।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *