ad-din-hospital-review

অভিজ্ঞতার আলোকে আদ-দ্বীন হাসপাতালের রিভিউ

রাজধানীর মগবাজারে অবস্থিত আদ-দ্বীন হাসপাতাল সন্তান জন্মদানের জন্য খুবই প্রসিদ্ধ একটি হাসপাতাল। প্রতিষ্টানটির খুবই নাম ডাক রয়েছে বিশেষ করে নারীদের মধ্যে। আদ-দ্বীন হাসপাতালটি শিশুদের চিকিৎসা ও গাইনি সেবার কারণেই ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে।

নারীদের মুখে মুখে প্রচারের কারণেই এ হাসপাতালটিতে অনেক স্বামীই তার

সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে যান চিকিৎসা পরামর্শের জন্য। আমিও স্ত্রীর কথায় আদ-দ্বীনে নিয়ে যাই তার নিয়মিত চেকআপের জন্য। পরবর্তীতে সেখানেই আমার প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করে।

মগবাজারের আদ্ব-দীন হাসপাতালে রাজধানীর সব জায়গা থেকেই যাওয়া যায়। হাসপাতালের লোকেশন এবং যাওয়ার উপায় দেখার জন্য ‘মগবাজারের আদ্ব-দীন হাসপাতালে লোকেশন ও যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক লেখাটা দেখতে পারেন।

আমার কয়েক দিনের অভিজ্ঞতার আলোকেই আমি আদ-দ্বীন হাসপাতাল নিয়ে পর্যালোচনা বা রিভিউ দেয়ার চেষ্টা করবো। যেনো অন্য কেউ এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি করানোর আগে জানতে পারেন যে সেখানে কি হয়। আমার রিভিউ পুরোটাই প্রসূতি মায়েদের সেবা কেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা থেকে।

পুরুষদের সঙ্গে কথা না বলা

আদ-দ্বীন হাসপাতালের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এখানে পুরুষদের সঙ্গে কোনো নার্স ডাক্তাররা সরাসরি কথা বলতে চান না। এমনকি কেবিনের বা ওয়ার্ডের মধ্যে কোনো পুরুষকে ঢুকতে দেয়া হয়না। এটা তারা করতেই পারে নারী রোগীদের পর্দার স্বার্থে। কিন্তু কি উদ্দেশ্যে তারা পুরুষদের দূরে রাখে তা জানতে পারবেন একটু পরেই।

তথ্য গোপন রেখে ব্যবসা করা

একজন প্রসূতিকে ডেলিভারী ওয়ার্ডে প্রবেশ করানোর পর থেকে আর কোনো আপডেট তার প্রিয় স্বামীকে দেয়া হয়না। কি চিকিৎসা করা হচ্ছে, রোগী কি অবস্থায় আছে তার কোনো কিছুই জানা যাবে না আদ-দ্বীন হাসপাতালে।

রোগীর সঙ্গে একজন নারী এটেন্ডন্স রাখার সুযোগ আছে বটে। কিন্তু আমাদের সমাজে প্রসূতির সঙ্গে সাধারণত তার মা বা শাশুড়ি বা মুরুব্বি কোনো নারীই থাকেন।  কিন্তু তাকে তো কিছুই বলা হয় না, কি চিকিৎসা করা হচ্ছে। আর সে নার্স বা ডাক্তারদের কাছে জানতে চাইবে এতোটা সাহস তার থাকার কথা নয়।

নারীদের সঙ্গে ব্যবসা করা

কয়েকদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার কাছে মনে হয়েছে, বাংলা ভাষায় বললে আদ-দ্বীন হাসপাতাল নারীদের সঙ্গে ব্যবসা করে। ডাক্তার বা নার্সরা কখনোই কোনো প্রশ্নের জবাব দেন না। জবাব দেবেন কি, তিনারা তো পুরুষ কোনো স্বজনদের সঙ্গে দেখাই করেন না। তারা রোগীর সঙ্গে থাকা কম শিক্ষিত/অশিক্ষিত নারী স্বজনকে যখন যা প্রয়োজন হয়, তাই নিয়ে আসতে বলে। কেনো তা প্রয়োজন তার কিছুই বলা হয় না। আপনি ওয়ার্ডের বাইরে থেকে সেই মধ্যস্থতাকারী নারী স্বজনের কাছে জানতে চাইবেন এই ঔষুধ কেনো আনতে হবে-সে কিছুই জবাব দিতে পারবে না। পারবে কি করে তাকে তো কিছুই বলা হয়নি। আর জানতে চাইলেও বলা হয়, আপনি তো আর ডাক্তার নয়।

আরও পড়ুন:  ঔষধী গাছ নিমের উপকারিতা

রোগীর স্বজনকে আপডেট না রাখা

রোগীর কি সমস্যা হয়েছে বা তাকে কি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তার কোনো কিছুই স্বজনকে আপডেট দেয়া হয়না। ফলে প্রিয়জনকে ওয়ার্ডের মধ্যে রেখে বাইরে আপনাকে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে অপক্ষোর প্রহর গুনতে হয়।

ডাক্তারের দেখা না পাওয়া ও নার্সদের দিয়ে চিকিৎসা করানো

আদ-দ্বীন হাসপাতালে ডাক্তারের দেখা মিলা ভার। শোনা যায়, এখানে শুধু নার্সদের দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। আসল বিষয় হলো, ওয়ার্ডের বাইরে যে পুরুষ স্বজনটি প্রিয়জনের জন্যে অধীর আগ্রহে অপক্ষো করছে, তার সঙ্গে ডাক্তাররা কখনোই কথা বা দেখা করেন না। তারা ভেতরে রোগী দেখে ওদিক দিয়েই চলে যান। এমনি কোনো নার্সের কাছ থেকেও রোগীর ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়না।

ডেলিভারির ধাপগুলো না জানা

আদ-দ্বীনের মিড ওয়াইফ বা ধাত্রীরা ডেলিভারির সবগুলো টেকনিক্যাল ধাপ জানেন কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে গ্রামের ধাত্রীগুলোর মতো তারা দেখে দেখে প্রসব করানো শিখেছে।

কেউ ডেলিভারীর সবগুলো ধাপ জানলে, সে জোড়পূর্বক কোনো সন্তান সম্ভব্য মা কে প্রসবের চেষ্টা করবে না। দু:খজনক আদ-দ্বীনের মিডওয়াইফরা এটাই করে। হালকা ডেলিভারী পেইন ওঠলেই আরো বেশি ব্যাথা ওঠানোর জন্য ইনজেকশন পুশ করে। এতে সময়ের আগেই প্রচণ্ড ব্যাথা সৃষ্টি হয়, কিন্তু এই কৃত্রিম ব্যাথায় সন্তান প্রসব হয় না। ফলে রোগীকে সিজার করতে বাধ্য করা হয়। এই লিংক থেকে সন্তান প্রসবের পর্যায়ক্রমিক ধাপ জেনে নিন সাবধনতার জন্য।

সুকৌশলে অপারেশনের দিকে ঠেলে দেয়া

আদ-দ্বীনে নরমাল ডেলিভারীর জন্য সময় নেয়া হয়। রোগীকে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অপারেশনের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয় না। তবে বিভিন্ন কৌশলে অনেক রোগীকে সিজারের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। অনেক সময় নিজেদের অজ্ঞতা ঢাকতে রোগীকে অপারেশন করা হচ্ছে। অথচ, সঠিকভাবে দেখা-শোনা করালে নরমাল ডেলিভারী হতে পারতো। সন্তান সম্ভবা নারীর ডেলিভারী না হয়ে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখানো হয়। অথচ ডেলিভারি পেইন অনেক ক্ষেত্রে ৩-৪ দিন পর্যন্ত স্টে করে। এরপরে নরমাল ডেলিভারী হয়। এই হাসপাতালে বড়জোড় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এরপরে যেভাবেই হোক রোগীকে সিজারে বাধ্য করবে।

দরজায় দরজায় টাকা

অনেকে আদ-দ্বীন হাসপাতালে কম টাকা খরচ হয় বলে রোগীকে নিয়ে যান। একজন সিজারিয়ান ডেলিভারির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৮-২০ হাজার মধ্যে এখানে সম্পন্ন করা সম্ভব। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে তা ৩০ হাজার পার হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন:  গর্ভবতী নারীদের কৃমি সমস্যা ও সমাধান

এদের লিস্টে দেয়া আছে অপারেশন খরচ মাত্র ৮ হাজার টাকা। কার্যত এখান থেকে অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে রিলিজ হতে ২০ হাজারের ওপরে পড়বে। এখানে খরচ গুলো বিভিন্ন স্টেপে ভাগ করা হয়েছে। তাই সাধারণ চোখে দেখা যায় না। কিন্তু একটু হিসাব করলেই বের হয়, ওহ এতো টাকা খরচ হয়ে গেছে।

বাজে ব্যবহার

আপিন কারো কাছ থেকে টাকা দিয়ে সেবা কিনছেন, কিন্তু সে যদি আপনাকে বাজে কথা বলে তখন আপনার কেমন লাগবে? কম টাকায় সেবা পাচ্ছেন মানে এই নয় যে আপনাকে বাজে কথা বলবে। হাসপাতালে যারা যান তাদের প্রত্যেকর স্বজনই শয্যাশয়ী। কেই হয়তো মৃত্যুপথযাত্রী। এমতাবস্থায় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হবে, তা বোধ হয় এখানকার স্টাফদের শেখানো হয় নাই।

নামাজের সুব্যবস্থা

আদদ্বীন হাসপাতালে রোগী কেন্দ্রিক অনেক সমস্যা থাকলেও এখানকার মসজিদে নামাজের সুব্যবস্তা আছে। ওযু শেষে হাত মুখ মোছার জন্য তোয়ালে দেয়া হয়।

তুলনামূলক কম খরচ

অনেক সমস্যা থাকলেও এখানে প্রচুর মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে যায়, কারণ এখানে তুলনামূলক কম খরচ পড়ে। ঢাকা শহরের সমমানের বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে এর চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি খরচ পড়ে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে।

নরমাল ডেলিভারীর চেষ্টা

আদদ্বীন হাসপাতাল বেছে নেয়ার অন্যতম কারণ একানে কিছুক্ষণের জন্য হলেও নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয়। অন্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকেই অপারেশনের জন্য মোটিভেট করা হয়। এখানে এই প্রবণতা অতো বেশি নয়।

পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে সিরিয়াসলি নজর দেন। এখানে পায়ের জুতো খুলে হাসপাতালে প্রবেশ করতে হয়। ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্লিনার আছেন, যারা সবসময় পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত।

এই হাসপাতালে আমার নিজের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। কয়েক দিনে অনেক হেনস্তা হতে হয়েছে। আদদ্বীন হাসপাতালে কয়েকদিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করা আছে ‘আদ-দ্বীন হাসপাতালে কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক লেখায়।

 

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *