natural problem during pregnant

গর্ভকালীন সময়ে নারীদের যত অসুবিধা

একটি মেয়ের বিয়ের পর প্রথম স্বপ্ন থাকে কবে সে মা হবে। বা মা হতে চলেছে এমন কথা কবে সে শুনবে। মা হওয়ার অনুভুতি কেবল সেই বুঝে যিনি মা হতে চলেছেন। এক অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম ভালোলাগা। শরীর অসুস্হ্য থাকে তারপরও পিছপা হয় না মাতৃত্বের স্বাদ থেকে।

মা হওয়ার কথা যখন একজন নারী জানতে পারেন তখন সে অসুস্থ্য থাকে। প্রত্যেক নারীই মাথাব্যাথা, বমিকরা, অস্থির লাগা, সব সময়ই ভালো না লাগার একটা প্রবণতা, গ্যাসের সমস্যা, খাবারে অরুচীসহ বহুবিদ সমস্যার সম্মুখীন হন গর্ভকালীন সময়ে। এসময়ে একজন নারীর সাধারণ সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো। এতে হয়তো নতুন যারা মা হতে চলেছেন, তারা উপকৃত হবেন। এই সমস্যাগুলোতে ভড়কে যাওয়ার কোনো কারণ নেই, এগুলো সব সম্ভব্য মায়েদের সাধারণ সমস্যা।

একাকিত্ব ও অসহায়ত্ব

গর্ভবতী নারীর জন্য একাকিত্ব সবচেয়ে বড় সমস্যা। অন্য সমস্যাগুলো চাইলে ওষুধ দিয়ে সমাধান করা যায়। কিন্তু একাকিত্বের কোনো সমাধান নেই। এই একাকিত্বে সে অসহায় বোধ করে। এই সময়ে আপনজনরা কাছে থাকলে গর্ভবতী নারীর খুব ভালো লাগবে। সে যখন একা থাকে তখন সে বেশি অসুস্থ্য বোধ করে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি স্বামী তার কাছে থাকে। অনেক নারীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তাদের স্বামী কাছে থাকলে তারা অর্ধেকের বেশি সুস্থ এমনিতেই হয়ে যায়। 

গর্ভাবস্থায় গ্যাসের সমস্যা

গ্যাস এমন একটা সমস্যা যা কম বেশি সকল নারী পুরুষ ভুগে থাকেন। আর গর্ভকালীন সময়ে গ্যাসের প্রভাব আরো প্রকট আকার ধারণ করে। গ্যাসের সমস্যার জন্য গলা দিয়ে ঢেকুর ওঠে। সেক্ষেত্রে খাবারের কিছু নিয়ম মেনে চললে এই থেকে অনেকটা মুক্ত বা শান্তিতে থাকা যাবে। তবে ডাক্তাররা গ্যাস কমানোর জন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন।

বমির সমস্যা

গর্ভকালীন সময়ে বমি হবে এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কারণ এই সময়ে সম্ভব্য মায়ের শরীরের হরমোন পরিবর্তন হয়। তাই এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। অনেকের বেশি বমি হয়, তাই ডাক্তার তাদের বমি কমানোর জন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন। তবে বমি কমানোর জন্য ওষুধ না খাওয়াই ভালো। বমি কমালে এতে শরীরের স্বাভাবিক পরিবর্তন ব্যাহত হয়। যথাসময়ে বমি এমনিতেই কমে যাবে।

গর্ভকালীন খাওয়াতে অরুচি

শারীরীক পরিবর্তনের কারণে সকল গর্ভবতী নারীরই প্রথম ৪-৫ মাস পর্যন্ত খাবারে অরুচী থাকে। কোনো কিছুই খেতে ভালো লাগে না। অন্যের খাওয়া দেখলে মনে হয়, কবে যে আমি এভাবে খেতে পারবো! এমন অরুচীর জন্য বিচলিত হবার দরকার নেই। এইসময় পর এমনিতেই খাবারের চাহিদা বেড়ে যাবে।

ঘন ঘন প্রস্রাব

গর্ভবতী মায়ের বার বার প্রস্রাব হওয়া একটা সাধারণ ব্যাপার। এসময়ে সম্ভব্য মায়েদের জরায়ুর আকার বেড়ে যাওয়ায় প্রস্রাবের ব্লাডারের আয়তন সংকুচিত হয়ে যায়। তাই অল্প সময়েই প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হয়। গর্ভকালীন নয় মাস মায়েদের বেশি বেশি প্রস্রাব হবে। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই।

আরও পড়ুন:  গাজরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়ে অনিদ্রা সমস্যা

অসুস্থ শরীরে কারোরই ঘুম আসতে চায় না। অনেক মা আছেন যারা অনিদ্রায় রাত দিন কাটিয়ে দেন সন্তানের জন্য। তবে ঘুমানো চেষ্টা করে যেতে হবে। শরীরে এই সময় প্রচুর বিশ্রাম ও নিদ্রা প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী নারীরা ঘুমানোর জন্য এই টিপসগুলো অনুশীলন করলে উপকার পেতে পারেন। 

গর্ভকালীন সময়ে পায়খানা না হওয়া

অনেকেরই গর্ভকালীন সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ পায়খানার চাপ আসে কিন্তু সহজে বের হতে চায় না। অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। তাই এই সময়ে ইসুবগুলির ভুসি খাওয়া যেতে পারে। কলা, পেপে, কমলা আর বেশি বেশি আঁশজাতীয়  সবজি খেতে হবে।

মাথা ঘুরিয়ে পরে যাওয়া

মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়া গর্ভকালীন সময়ে নারীদের খুব সাধারণ সমস্যা। এই সময় গর্ভবতী নারীর শরীর দুর্বল থাকে। তাই দুর্বলতা কাটানোর জন্য দুধ, ডিমসহ প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।

গর্ভকালীন কোমর ব্যাথা করা

গর্ভকালীন সময়ে একজায়গায় অনেকক্ষণ বসে থাকলে কোমর ব্যাথা অনুভত হয়। এইসময়ে এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে থাকা যায় না। আবার দাঁড়িয়েও থাকা যায় না। তাই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আর কিছুক্ষণ বসে কিংবা কিছুক্ষণ শুয়ে সময় কাটাতে হবে।

গর্ভকালীন পায়ে ব্যাথা

পায়ে কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না। তারপরও কেনো যেন পা ব্যাথা করে। শারীরীক পরিবর্তনের জন্য এমনটা হয়ে থাকে। এটা নিয়েও দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। 

পায়ে পানি নামা ও ফুলে যাওয়া

সন্তান জন্ম নেয়ার কিছুদিন আগে গর্ভবতী নারীর পায়ে পানি চলে আসে ও পা ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। এতে অনেকেই ভয় পেয়ে যায়। পা ভারী হয়ে গেলে হাটা চলা সমস্যা হয়। এসময় ডাক্তারা পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে উচুঁ স্থানে পা রেখে ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।সন্তান জন্ম নেয়ার আগমুহূর্তে পা ফুলে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো। 

হালকা জ্বর অনুভূত হওয়া ও শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকা

গর্ভকালীন সময়ে জ্বর আসতে পারে। এজন্য হুটহাট জ্বরের ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। এতে গর্ভাবস্থা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বা গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে শরীরে তাপ স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি থাকে। এজন্য ভয়ের কোনো কারন নেই। জ্বর হয়েছে এটাও ভাবার দরকার নেই। আপনার শরীরে অন্য একটা জীবন বেড়ে উঠছে। তাই বিভিন্ন পরিবর্তন হবেই।

গর্ভকালীন মাসিকের রাস্তায় সাদা স্রাব বের হওয়া

গর্ভকালীন সময়ে মাসিকের রাস্তা দিয়ে সাদা সাদা বা হলদেটে ধরণের স্রাব বের হয়। এটাকে ডাক্তারী পরিভাষায় বলে লিউকোরিয়া। এটা হলে বেশিরভাগ সময়ে মাসিকের রাস্তায় খুব চুলকায়। অনেকের অধিক পরিমানে বের হয়, যা তাকে খুব যন্ত্রনা দেয়। এই সমস্যা শিশু জন্ম না হওয়া পর্যন্ত থাকে। এই যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে ‘মাসিকের রাস্তার সাদা স্রাব বা লিওকোরিয়া থেকে মুক্তির উপায় পোস্টটি পড়ুন।  

আরও পড়ুন:  গর্ভবতী নারীদের কৃমি সমস্যা ও সমাধান

গর্ভকালীন গুড়া কৃমি সমস্যা

গর্ভবতী নারীর আর একটা বড় সমস্যা হলো কৃমির সমস্যা। গর্ভাবস্থায় কৃমির ওষুধের অনুমতি না থাকায় এই সমস্যায় আরও বেশি ভুগতে হয়।  অনেকের অধিক পরিমান কৃমিতে জ্বালাতন করে। কৃমি সমস্যা থেকে দূরে থাকতে বা কমাতে ‘গর্ভবতী নারীদের কৃমি সমস্যা ও সমাধান’ এই পোস্টটি পড়তে পারেন। 

মেসতা, ব্রণ সমস্যা

মেসতা ব্রণসহ মুখে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় গর্ভকালীন সময়ে। তবে খুব সতর্কতার সাথে এইগুলা মেইনটেইন করতে হয় নারীদের।

ঘুমের মধ্যে বারবার জেগে ওঠা

এই সময়ে হঠাৎ ঘুমের ভিতর জেগে উঠাও একটা সমস্যা। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।

প্রথম তিন মাস পানি না খেতে পারা

গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ গর্ভবতী নারীর প্রথম তিন মাস পানি খেতে অনেক সমস্যা হয়। তবে দিন যত বাড়তে থাকে এই সমস্যা দূর হতে থাকে।

উপরোক্ত সমস্যাগুলো আমার আশে পাশের মানুষ ও অভিজ্ঞতার আলোকে লিখা। এরফলে হয়তো অনেকেই উপকৃত হবেন। শুধু একটি গটলা বলেই আমার লিখাটি শেষ করবো। আমার এক বান্ধবীর কয়েক দিন টানা জ্বর আসলো। সে মহল্লার ডাক্তারের কাছ থেকে জ্বরের ওষুধ ও এন্টোবায়োটিক খেলো জ্বর সারাবার জন্য। কিন্তু কয়েক দিন পরেও জ্বর না কমলে হাসপাতালের ডাক্তার দেখায়। পরে জানতে পারে সে গর্ভবতী ছিলো।

=====

সার্চিং কিওয়ার্ড: গর্ভবতীর সমস্যাগুলো, গর্ভবতী নারীদের সমস্যা, গর্ভকালীন সমস্যা, গর্ভকালীন সময়ে যা জানতে হয়, গর্ভকালীন সাধারণ সমস্যা

গর্ভকালীন সময়ে মাথাব্যাথা, বমি, গ্যাসের সমস্যা, কৃমিসহ নারীদের নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। কী কী সমস্যা থাকে তা জানলে মানষিকভাবে যেমন প্রস্তুত থাকা যায়, তেমনি অনেক অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়।


Posted

in

,

by

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *